Pharma Asia by Saiful Islam Shufol: আত্মহত্যা থেকে উত্তরনের উপায়।

Sunday, January 25, 2015

আত্মহত্যা থেকে উত্তরনের উপায়।

‪#‎আত্মহত্যা_কি‬ :
আত্মহত্যা হচ্ছে আত্মবিনাস, আত্মহনন ও আত্মবিলোপ। কোন ব্যক্তি যখন ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তনুসারে নিজেই নিজের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানোর লক্ষ্যে আত্মহনন ও আত্মবিলোপের পথ বেছে নেন তখন তাকে আত্মহত্যা বলে।
‪#‎আত্মহত্যার_কারণ‬ :
আত্মহত্যার প্রবণতা একধরণের সামাজিক ব্যাধি। বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়। ব্যক্তির উদাসী অবস্থা, ব্যাক্তিগত ব্যর্থতা, প্রেমে ব্যর্থতা, ইভ টিজিং, বেঁচে থাকার অনীহা, চাকরি হারানোর কারণে, বেকারত্ব বা অর্থভাব, নিঃসজ্ঞতা, মাতা-পিতার অবহেলা, আত্মগ্লানি ও অসমাজিক পরিবেশের কারণে সংগঠিত হয়। সাধারণত একজন মানুষ আত্মহত্যার পথ তখনই বেছে নেন যখন সে বেঁচে থাকার ক্ষীণ সম্ভাবনাটুকু হারিয়ে ফেলেন এবং নিজের জীবনকে মূল্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। সাধারণত ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, আত্মহত্যার প্রবণতা একধরণের মানসিকরোগ, মানসিক চাপ, ব্যক্তিতের সমস্যা, কোনভাবে আবেগ তাড়িত হয়ে মানুষ নিজেকে কষ্ট দেয় বা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অধিকাংশ আত্মহত্যা সংগঠিত হয় প্রেম ঘটিত কারণে, প্রেমে ব্যর্থ হবার ফলে প্রেমিক বা প্রেমিকা আত্মহত্যা করে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নারীর উপর অন্যায় দৈহিক নির্যাতন এবং সম্ভমহানী করে তাহলে ঐ ভুক্তভোগী নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অনেকে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ কারণে আত্মহনন করে। যেমন অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা কোন অপরাধমূলক কাজ করার ফলে পিতা-মাতার কড়াশাসনের ভয়ে আত্মহত্যা করে, আবার পরীক্ষা দিতে না পারা বা পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ার কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করে। বর্তমানে অনেক আত্নহত্যার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির যথেচ্ছা ব্যবহার ভূমিকা রাখে। যেমন কোন সময়ে হয়তো তার প্রিয়জনের সাথে অন্তরঙ্গ কোন ছবি তুলেছে, তা আবার প্রিয়জনের ফেইসবুক, টুইটারে ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা বিশ্বে, আবার হয়তো গোপন ভিডিওচিত্র ধারণ করেও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশ্বময়। এই পরিস্থিতিতে, ভুক্তভোগী মেয়ে বা ছেলেটা অভিমানে ও লজ্জায় বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। এইরকম অহরহ ঘটনা দেখা যায় আমাদের বর্তমান সমাজে।
‪#‎আত্মহত্যা_সম্পর্কে_বিভিন্ন_ধর্মের_দৃষ্টিভঙ্গি‬ :
পৃথিবীর কোন ধর্মই আত্মহত্যাকে বৈধ বলে অনুমোদন করেনি। আমাদের ইসলাম ধর্মেও আত্মহত্যাকে কঠোর নিষেধ করা হয়েছে এবং ঘোষণা করা হয়েছে আত্মহত্যা মানব হত্যার চেয়েও জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে। আত্মহত্যাকারী ব্যাক্তির দাফন-কাফনেও কঠোর বিধি নিষেধ আছে ইসলাম ধর্মে। খ্রিষ্টান ধর্মে আত্মহত্যাকে হত্যার সমতুল্য অপরাধ বলে অভিহিত করেছে। ইহুদি ধর্মেও আত্মহত্যাকে অপরাধ বলে মনে করে। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মেও আত্মহত্যাকে অনুমোদন করেনি।
‪#‎আত্মহত্যার_পক্ষে_বিপক্ষে_মত‬ :
পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নীতিদার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী আত্মহত্যার পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্নমত ব্যক্ত করেছেন।
দার্শনিক সক্রেটিস মনে করেন যে, মানুষ দেবতার সম্পদ এবং তাই মানুষের আত্মহত্যা করা উচিত নয়। তার ছাত্র প্লেটোর মতে, চরম দুঃখ দুর্দশা থেকে নিষ্কৃতির উপায় হিসাবে আত্মহত্যা সমর্থনযোগ্য। প্লেটোর শিষ্য এরিস্টটল বলেন, আত্মহত্যাকে কাপুরুষোচিত কাজ, রাষ্টীয় আইনের পরিপন্থী এবং অপরাধমূলক কাজ বলে অভিহিত করেন। রোমান দার্শনিক সেনেকো আত্মহত্যাকে সমর্থন করে বলেন আত্মহত্যা একজন মানুষকে দুঃখ-কষ্ঠভোগ থেকে নিস্কৃতি দিতে সাহায্য করে। জন লক ও ইমানুয়েল কান্ট আত্মহত্যাকে অনৈতিক ও অন্যায় কাজ বলে অভিহিত করেছেন। এপিকিউরাস মনে করেন যদি জীবনের সুখ ফুরিয়ে যায় তাহলে একজন মুক্ত মানুষের পক্ষে এ নশ্বর জগত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ হলো জীবনের অবসান ঘটানো। বর্তমান সময়ে আত্মহত্যা সম্পর্কীত ধারনার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, এবং আত্মহত্যা সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সংবেদনশীল। আত্মহত্যার মতো ঘটনা গুলো সর্বস্তরের মানুষকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিচ্ছে। বর্তমান সময়ের নীতিদার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা আত্মহত্যাকে সমর্থন করেননা। তাদের মতে, আত্মহননের প্রবণতা এক প্রকার সামাজিক সমস্যা।
‪#‎আত্মহত্যাকে_না_বলুন‬ :
ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন আত্মহত্যা অনুমোদনযোগ্য নয় তেমনি মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ইহা অনুমোদনযোগ্য নয়। মানুষ সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি, মানুষের জন্ম যেমন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ঘটে তেমনি তাদের মৃত্যুও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ঘটবে। আর আত্মহত্যা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার সমতুল্য। এটা মূল্যবোধ পরিপন্থী কাজ। জীবনে দুঃখ-কষ্ট থাকবে। থাকবে নানা প্রকার বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকুল পরিবেশ। এগুলোকে জয় করতে পারাটাই বিবেক সম্পন্ন মানুষের কর্তব্য ও কাজ, এইসব প্রতিকুল পরিবেশ থেকে মুক্তির জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া অন্যায় ও মানব ধর্মের বিরোধী। কোন পুরুষ যদি কোন নারীর সম্ভমহানী করে তাহলে ঐ পুরুষকে তার কৃত অপরাধের জন্য প্রচলিত আইননুসারে শাস্তিভোগের ব্যবস্থা করার জন্য ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় নেয়া উচিত, কিন্তু তা না করে আত্মহত্যা করা সমর্থযোগ্য নয়। এতে করে অপরাধীকে জিতিয়ে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে ঐ অপরাধীর মাধ্যমে এই ধরণের অপরাধ পুনরায় সংগঠিত হতে পারে এবং অনেকে ক্ষেত্রে তা হয়েও থাকে। কোন পুরুষ দ্বারা কোন মেয়ের সম্ভমহানী হলে পরিবার ও সমাজের উচিত তার পাশে থাকা যাতে সে নিজেকে অসহায় মনে না করে। নারীদের ক্ষেত্রে কোন পুরুষের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক গড়ার সময় সতর্ক ও বুঝে শুনে করা উচিত, যাতে পরবর্তীতে প্রতারিত হতে না হয়। যদি কেউ মনে করে যে কোনো কারণে মানসিক কষ্টের মধ্যে আছে, তবে সে সমস্যা গোপন না করে তা বিশ্বাস করা যায় এমন কারো সাথে আলোচনা করতে পারে। সমস্যাগুলো আলোচনা করা হলে সে নিজে যেমন অনেকটা মানসিক ভারমুক্ত হবে, তেমনি তার সমস্যা সম্পর্কে জেনে তাকে সঠিক পথ প্রদর্শনও সহজ হবে। পিতা-মাতার উচিত সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা যাতে সন্তানরা তাদের সমস্যাগুলো পিতা-মাতার সাথে খোলা মেলাভাবে আলোচনা করতে পারে। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগের সাইট গুলোর মাধ্যমে অপরিচিত কারো সাথে সম্পর্কে না জড়ানোই ভাল, কারণ এতে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর একটা বিষয় সবার জীবনে কোন না কোন সময় ব্যর্থতা আসবে, আসবে সফলতাও, কিন্তু ব্যর্থতার আতংকে আত্মহনন কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং তার মুখোমুখি হয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে ব্যর্থতা না থাকলে সফলতা উপলব্ধি করা যায় না। সকলকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে মনে রাখতে হবে আত্মহত্যা রোধের প্রধান উপায় হলো আত্মপলব্ধি। নিজের জীবনের যথার্থ মূল্য নিজেকে উপলব্ধি করতে হবে, এবং নিজেকে কখনো নিকৃষ্ট ও তুচ্ছ বলে মনে করা উচিত নয়। সর্বপরি সকলকে ধর্মীয় এবং নৈতিক বিধি-বিধান মেনে চলা উচিত, তাহলে আত্মহত্যা রোধ করা সম্ভব হবে।
‪#‎শেষ_কথা‬ :
পরিশেষে একটা কথাই বলব আত্মহত্যা সমস্যা থেকে উত্তরনের কোন পন্থা নয়। তাই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার পন্থা হিসাবে আত্নহত্যা অনুমোদনযোগ্য নয়। আত্নহত্যার মাধ্যমে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কোন মানে হয় না। নিজের জীবনের প্রয়োজনীয়তা নিজেকে বুঝতে হবে। আত্মহত্যার পক্ষে যতই যুক্তি থাকুক না কেন পৃথিবীর কোন সমাজই আত্মহত্যাকে গ্রহণ করেনি এখনো তা গ্রহণযোগ্যতা পাইনি। ভবিষ্যতেও পাবে না। আসুন আমরা সবাই আত্মহত্যাকে না বলি।

0 comments:

Post a Comment